Home রাজনীতি ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট, ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ

ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট, ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ

638
0
SHARE

আন্দোলন ও দ্রুত নতুন নির্বাচনের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনের উদ্যোগ, বিভাগীয় শহরেও সমাবেশের পরিকল্পনা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধাক্কা সামলিয়ে ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে নতুন নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই মাঠে দেখা যাবে এ ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের। নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি সামনে রেখে রাজধানীতে বড় ধরনের মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে রাজপথে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও পর্যায়ক্রমে সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

তারা আরও জানান, রাজপথে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ ঐক্য গড়ে তোলা হবে। প্রথমত ডান-বাম ও ইসলামপন্থি সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন এবং দ্বিতীয়ত একই প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নতুন নির্বাচনের দাবি।

জানতে চাইলে গণস্বাস্থের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা এতদিন নাড়াচাড়া না করলেও সম্প্রতি এ ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছে। ফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গেও আমি বৈঠক করেছি। তাদেরও এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে। এবার বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে বলে আমি আশাবাদী। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র তৈরিতে ডান-বাম সব রাজনৈতিক দল একই পতাকাতলে আসবে। কারণ, এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে নেতৃত্বের বিষয়টি এখানে মুখ্য নয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যটাই আসল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেন থাকলেও এটা বলতে দ্বিধা নেই এর মূল ‘স্টেকহোল্ডার (অংশীজন)’ বিএনপি। সবকিছুই তো বিএনপির হাতে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজপথে নামতে উদগ্রীব। জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে আমরা বড় আকারে রাজপথে নামার চিন্তাভাবনা করছি। ডিসেম্বরে রাজধানীতে সমাবেশের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। সেই সমাবেশ হবে বলে আমি আশাবাদী।

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের রেখে ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে এ ঐক্য গড়ে তোলা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে শিগগিরই জোট ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বসবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এসব বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ও করণীয় সম্পর্কে সবার মতামত নেয়া হবে। তাদের মতামত পাওয়ার পরই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা। পাশাপাশি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সম্ভাব্য রূপরেখা তৈরি করা হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হবে, নেতৃত্বে কে থাকবে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হবে- তা নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির তিনজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি তাদের প্রধান দাবি। অন্যান্য দলগুলোও চায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হোক। কিন্তু এ দাবিতে ওইসব দল আন্দোলন কর্মসূচি পালনে ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাও করতে পারে। তাছাড়া এ নিয়ে নানা মহলে নেতিবাচক আলোচনাও হতে পারে। এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি মূল দাবি নাও থাকতে পারে।

বিএনপি আপাতত দেশে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরকারের বিপক্ষে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের একটি প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। শুরুতে জোট ও ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামা হবে। আগামী মাস থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা রাজপথে সক্রিয় হতে চান। ডিসেম্বরে বড় ধরনের শোডাউনের মাধ্যমে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামবে তারা। অন্যান্য দলকেও একই ইস্যুতে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকবে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি। এভাবে তারা পৃথক কর্মসূচি পালন করে যাবে। এরপর সময়-সুযোগ মতো সব দল মিলে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ নামে একটি জোট বা প্ল্যার্টফর্ম তৈরি করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেই প্ল্যাটফর্ম থেকেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ মুহূর্তে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। এ লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা চাই একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হোক। কোনো দলকে আমরা আলাদা করে ভাবছি না। রাজনীতিতে সুস্থ ধারা আনতে হলে আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে সোচ্চার হতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা জোট ও ফ্রন্ট দুটোকেই রাখতে চাই, এমনকি তারা আছেও। এর পরিধি আরও বাড়ানো দরকার।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারবিরোধী একটা জনমত তৈরি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। দেশের প্রতিটি মানুষ এবং গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক যেসব দল রয়েছে তাদেরও দাবি একই। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক থাকলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে বলে আমি মনে করি না। বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে নানা কারণে যারা জোট ও ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছেন তারাও ফিরে আসতে পারেন বলে জানান ফখরুল।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। সবাই মোটামুটি ইতিবাচক।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ফ্রন্টের নেতারা নিজ নিজ দল গোছাতে ব্যস্ত। আশা করি দ্রুতই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় হবে। আগামী মাস থেকেই ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ড আরও দৃশ্যমান হবে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর এদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনাসহ জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দাবি নিয়ে আমরা সোচ্চার হব। ডিসেম্বরে রাজধানীতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সমাবেশের চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমরা কাজও শুরু করেছি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। ডান, বাম এমনকি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে কাদের সিদ্দিকী ইতিমধ্যে ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছেন।